নাটোর ও লালমনিরহাটে সার না পেয়ে সড়ক অবরোধ কৃষকদের

নাটোরের নলডাঙ্গা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় সার সংকট
নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কৃষকরা। গতকাল রোববার সকালে এ
কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে উপজেলা প্রশাসন কৃষকদের সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলে
অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
নলডাঙ্গার স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, রোববার সকাল ১০টা থেকে
সরকারের নির্ধারিত দামে প্রতি বস্তা টিএসপি এক হাজার ৩৫০ টাকা, ইউরিয়া এক হাজার
৩৫০ টাকা, ডিএপি এক হাজার ২৮০ টাকা, এমওপি এক হাজার ২৮০ টাকা দরে দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ডিলারেরা সার দেননি।
উপজেলার সমসখলসী গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, সরকারি মূল্যের
চেয়ে প্রতি বস্তায় ৬০০-৭০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনে কোনো রকমে তাদের আবাদ করতে
হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সার পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে তারা ফসল উৎপাদন
করতে পারবেন না। এতে ফলন কমবে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
আরেক কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল ১০টার দিকে মেসার্স শ্যাম
সুন্দর আগরওয়ালার ডিলারের দোকানে সার নিতে এসে না পেয়ে তারা প্রথমে নলডাঙ্গা
উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করেন। এতে কোনো সমাধান না হওয়ায় তারা উপজেলা পরিষদের সামনের
সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা
(ইউএনও) মো. আল এমরান খান ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিষোয়ার হোসেন থানা পুলিশসহ
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কৃষকদের অভিযোগ শুনে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
তাদের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন কৃষকরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল এমরান খান বলেন, জমি বোরো ধানের
জন্য প্রস্তুত হতে আরও ২০ দিন সময় লাগবে। আশা করছি, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শতভাগ
সারের চাহিদা পূরণ করতে পারব।
নাটোর ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, সরকার এখন
ইউরিয়া ও টিএসপি যৌথভাবে ডিএপি নামে বাজারজাত করছে। কৃষকরা এটা বুঝতে না পেরে
আলাদাভাবে টিএপি সারের জন্য আন্দোলন করছেন।
এদিকে, একই দাবিতে গতকাল সকাল ১০টার দিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী
মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কৃষকরা। উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের বিসিআইসির
পরিবেশক ‘মেসার্স ওয়াছেক খান সার বিক্রয় কেন্দ্রের’ সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
খবর পেয়ে ইউএনও শামীম মিঞা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে
গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন। পর্যাপ্ত সার সরবরাহের আশ্বাস পেলে কৃষকরা তিন ঘণ্টা
পর অবরোধ তুলে নেন।
কৃষকদের অভিযোগ, ভুট্টা মৌসুম শুরুর পর থেকেই এলাকায় ইউরিয়া সারের
তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে বিক্রয়কেন্দ্রে গেলেও সার পাচ্ছিলেন না
তারা। অথচ রোববার সকালে সার দেওয়া হবে– এমন ঘোষণা শুনে ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়ান
কৃষকরা। কিন্তু কয়েকজনকে সামান্য সার দেওয়ার পর হঠাৎ বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া
হয়।
অভিযোগ ওঠে, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, তানজিলা
আক্তার ও গোবিন্দ কুমারের সহযোগিতায় পরিবেশক খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে সার
বিক্রি করছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষকরা টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন এবং
পরিবেশকসহ সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি করেন।
ইউএনও শামীম মিঞা বলেন, একসঙ্গে অনেক কৃষক সার কিনতে আসায় চাপ বেড়ে
গেছে। মজুত কম থাকায় সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। চাহিদা কমলে পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে
আসবে।
বিসিআইসির পরিবেশক ওয়াছেক খানের দাবি, ‘কৃষি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি
ছাড়া সার বিক্রি করা হয় না। আমার ছেলেরা দোকান দেখাশোনা করে। অভিযোগ সম্পর্কে আমি
তেমন কিছু জানি না।’








