দেশে কোটিপতি কমেছে ৭১৯ জন
ব্যাংক
খাতে কোটিপতি গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে এক কোটি টাকার বেশি
জমা রয়েছে- এমন হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি, যা গত বছরের
ডিসেম্বরের তুলনায় ৭১৯টি কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে
এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে,
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কিছু সাবেক এমপি,
মন্ত্রী ও নেতার ব্যাংক হিসাব জব্দ ও তলব করা হয়েছে। এর ফলে বড় অঙ্কের
আমানতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই নিরাপত্তার কারণে ব্যাংক থেকে অর্থ
সরিয়ে নিচ্ছেন। এতে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা কমলেও কিছু অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ
বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য
অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি হিসাবগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ
৭৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫ সালের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি
টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে কোটিপতি হিসাবগুলোর আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
তবে সার্বিকভাবে ব্যাংক
খাতে হিসাব ও আমানতের সংখ্যা বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৬
কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি, আর মার্চ শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার
৮২১টিতে। একই সময়ে আমানতের পরিমাণ ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯
লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে হিসাব বেড়েছে প্রায় ২৪ লাখ ৬০
হাজারটি এবং আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোটিপতি হিসাব মানেই তা ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়। এসব
হিসাবের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং একজন ব্যক্তির একাধিক
হিসাবও রয়েছে। ফলে হিসাবের সংখ্যা কমার অর্থ ব্যক্তি কোটিপতির সংখ্যা কমেছে- তা
নির্ধারণ করা যায় না।
বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে দেশে কেবল ৫ জন কোটিপতি
হিসাবধারী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তা বেড়ে হয় ৪৭ জন। এরপর ১৯৮০ সালে ছিল ৯৮টি, ১৯৯০ সালে
৯৪৩টি এবং ২০০৮ সালে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালের শেষে এ সংখ্যা ছিল ৯৩
হাজার ৮৯০টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। সর্বশেষ
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তা হয়েছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি, যা মার্চে নেমে আসে ১ লাখ ২১
হাজার ৩৬২টিতে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের
প্রভাবে ব্যাংক খাতে উচ্চমূল্যের হিসাব কমেছে। তবে মোট হিসাব ও আমানতের অঙ্ক
বেড়েছে, যা অর্থনীতিতে আস্থার ইঙ্গিতও দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।








